আরণ্যক 1939 : বিভূতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত টীকাধর্মী পরিচিতি লিপিবদ্ধ হলো।
Table of Contents
আরণ্যক 1939 (১৩৫৪ ব.), বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
উপন্যাস। নিসর্গপ্রধান উপন্যাস।
বিষয়-কাহিনি
- সত্যচরণ নামে সুশিক্ষিত এক ভদ্রসন্তান স্কুল মাস্টারের চাকরী হারিয়ে কলকাতায় আসে। পরে সে জঙ্গলমহলের ভূমিহীন চাষি শ্রেণি ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের মধ্যে জমি বিলি ব্যবস্থার জন্যে ম্যানেজার নিযুক্ত হয়ে চলে যায় সেখানে। গাছপালা শোভিত অরণ্য প্রকৃতির জগৎ যে ক্রমশ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হচ্ছে—সেই দুঃখের আত্মকথন শোনা যায় সত্যচরণের কাছে।
আরণ্যকের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
- অরণ্য প্রকৃতি-নির্ভর কাহিনি,
- আরণ্যক চরিত্রের উপস্থিতি,
- নিসর্গ প্রকৃতির রূপসৌন্দর্য,
- লোকদেবতা এবং নানা ভাবকল্পনার মেলবন্ধন, আঙ্গিকগত বিচিত্রতা।
বিশেষত্ব
- প্রাকৃতিক পটভূমিকায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে সত্যচরণের উপলব্ধি এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। ‘পথের পাঁচালী’র পর প্রকৃতির অমোঘ রহস্যের বর্ণনায় ‘আরণ্যকে’র ভূমিকা যথেষ্ট। অরণ্য প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তরঙ্গ যোগাযোগের ফলে এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে।
- ব্যক্তি বিভূতিভূষণ-এর দেখা অরণ্য প্রকৃতি ও অরণ্য-জীবনের চিত্র এই উপন্যাসের চিত্রিত হয়েছে। ভানুমতী, কুন্তী, মঞ্চী প্রভৃতি চরিত্র খুব জীবন্ত রূপে প্রকাশিত হয়েছে।
- এই উপন্যাসের শিশুর কৌতুহল যেমন আছে তেমনি আছে যুবক বৃদ্ধের কল্পনার বিষয়। উপন্যাসের মূল রস হলো রূপকথার রস।
- ‘আরণ্যক’ উপন্যাসটি ভ্রমণকাহিনি, দিনপঞ্জি বা ডায়েরি এবং উপন্যাস—এই সংরূপ নিয়ে সমালোচক মহলে নানা অভিমত উপস্থিত হয়। যদিও লেখক ভূমিকায় লিখেছেন— “ইহা ভ্রমণবৃত্তান্ত বা ডায়েরি নহে, উপন্যাস।”
- ‘আরণ্যকে’র বিমুগ্ধ নিষ্ক্রিয় দর্শক সত্যাচরণের জীবনে আরণ্যপ্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানুষ।
- আরণ্যকের কথক সত্যাচরণ, ‘পথের পাঁচালী’র অপু আর তাদের সৃষ্টিকর্তা বিভূতিভূষণ ভিন্নরূপে একই সত্তার প্রকাশ। বিভূতিভূষণ-এর প্রকৃতি প্রেম, নিসর্গমুখীনতা ‘আরণ্যকে’ প্রকাশ পেয়েছে।