Menu

আর্য মহাকাব্যের ভূমিকা

আর্য মহাকাব্যের ভূমিকা : আর্য মহাকাব্য বলতে সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণ ও মহাভারত কাব্যদ্বয়কে বোঝায়।

আর্য মহাকাব্যের ভূমিকা


বৈদিক সাহিত্য ও লৌকিক সাহিত্যের মধ্যবর্তী যুগে ভারতবর্ষে দুই বৃহদায়তন মহাকাব্যের আবির্ভাব ঘটে। এই মহাকাব্য দুটি হল-রামায়ণ এবং মহাভারত। কেবল আয়তনে নয়, বিষয় বৈচিত্র্যেও এই মহাকাব্যদ্বয় সমৃদ্ধ। রামায়ণের রচয়িতা বাল্মীকি, মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। ঋষি কবিদ্বয় দ্বারা রচিত বলে রামায়ণ ও মহাভারতকে বলা হয় আর্য মহাকাব্য।

বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যে এবং সৃষ্টির বিশালতায় এই মহাকাব্য দুটি অনন্য। ভারতবর্ষের যুগসঞ্চিত হৃদয়াবেগের, ধর্মের ও দর্শনের, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটেছে এই দুটি মহাকাব্যে। অতীত যুগের ঠিক কোন্ সময়ে এই দুই মহাকাব্যের আবির্ভাব ঘটে তার তথ্যভিত্তিক ঐতিহাসিক প্রমাণ দুর্লভ। বিশেষতঃ এই দুই মহাকাব্যের স্রষ্টা তাঁদের কালজয়ী রচনার মধ্য দিয়ে একটি সমগ্র দেশকে, একটি সমগ্র জাতিকে, একটি সমগ্র যুগকে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে উদ্ভাসিত করে মানবের চিরন্তন সামগ্রী করে তুলেছেন। রামায়ণ-মহাভারত তাই একাধারে ইতিহাস, পুরাণ, ধর্মশাস্ত্র ও মহাকাব্য।

ইংরাজী ‘Epic’ শব্দের বাংলা হল মহাকাব্য। Epic শব্দটি আবার গ্রীক ‘epos’ শব্দ থেকে গঠিত, যার অর্থ শব্দ বা সঙ্গীত। অর্থপ্রসারের ফলে এর অর্থ দাঁড়িয়েছে-বীর্যগাথা বা শৌর্যের কাহিনী। সেই গাথা বা কাহিনীর বাঙ্ময় প্রকাশ হল এপিক বা মহাকাব্য। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এপিককে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন-Epic of growth এবং epic of art. প্রথমটি সাহিত্যিক মহাকাব্য, দ্বিতীয়টি কলাত্মক মহাকাব্য। ভারতবর্ষের রামায়ণ-মহাভারত, গ্রীসের ইলিয়াড-অডিসি সাহিত্যিক মহাকাব্যের নিদর্শন। ভাস, অশ্বঘোষ, কালিদাস প্রভৃতির কবিকৃতি দ্বিতীয় শ্রেণীর রচনা। প্রথম শ্রেণীর মহাকাব্য বহু শতাব্দীর বহু ভাবধারায় পুষ্ট, বহু কবির রচনার সুসংহত রূপ। দ্বিতীয় শ্রেণীর মহাকাব্য একক কবির প্রয়াসের ফলশ্রুতি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!