ইউসুফ জোলেখা কাব্য : মধ্যযুগের ইসালামী সাহিত্যের প্রণয়োপাখ্যান হিসেবে ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যটির আবেদন কোনো অংশে কম নয়।
Table of Contents
ইউসুফ জোলেখা কাব্য, শাহ মুহম্মদ সগীর
রোমান্টিক প্রণয়ন মূলক কাহিনী কাব্য।
নায়ক ইউসুফ ও নায়িকা জোলেখার প্রণয় কাহিনী হল কাব্যের উপজীব্য বিষয়। এছাড়া ইউসুফকে লাভ করার জন্য প্রেমিকা জোলেখার আজীবন প্রয়াসের ইতিহাস ও কাহিনীতে বর্ণিত। কাব্যটিতে সুফী তত্ত্বের প্রভাব থাকলেও দুই মর্ত্য মানব মানবীর ( ইউসুফ, জোলেখা) প্রেমই প্রাধান্য লাভ করেছে।
ইউসুফ-জোলেখা কাব্যটি শুরু হয়েছে ‘আল্লাহ ও রসুল বন্দনা’, ‘মাতা পিতা ও গুরুজন বন্দনা’, ‘রাজপ্রশস্তি’ ও ‘পুস্তক রচনার কথা’ দিয়ে। যেমন, ‘আল্লাহ ও রসুল বন্দনা’ অংশে কবি লিখেছেন :
মোহাম্মদ ছগির দাসকদাস তান।
তাহা হোহস্ত ‘বাড়’ ভাগ্য মোক নাহি আন।।
কিংবা, ‘মাতাপিতা ও গুরুজন বন্দনা’ অংশে কবি জানিয়েছেন,
ন খাই খাওয়ার পিতা ন পরি পরাএ
কত দুঃখে এক এক বছর গোঞাএ।।
কাব্যটির বহিরঙ্গে রয়েছে সুখ -দুঃখ, বিরহ – মিলনেট ছবি আর অন্তরঙ্গে উদার সুফিধর্মের ‘ আসীক – মাশোক ’ তও্ব বা জীবাত্মা – পরমাত্মার ভক্তির তত্ত্ব রয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধা ও কৃষ্ণের মতো জোলেখা ‘ আসীক’ বা জীবাত্মা প্রতীক এবং ইউসুফ ‘মাশোক’ বা পরমাত্মার প্রতীক।
চরিত্র চিত্রনের সাগীর কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ইউসুফের নৈতিকতা বাস্তব বুদ্ধি, প্রলোভন জয় করার ক্ষমতা, ঈশ্বর ভক্তি, পিতৃভক্তি ও ভাতৃস্নেহ ও প্রভূতি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় ।
জোলেখা এমন এক চরিত্র যে ধর্মবোধকে স্বীকার করে নিও মানবিক আদর্শে পূর্ণ বিকাশিত হয়েছে। কবি বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতাবোধ দিয়ে জোলেখা চরিত্রকে চিত্রিত করেছেন। সে সুন্দরী, প্রগলভা,বুদ্ধিমতী, চপলা এবং যুবতী।
প্রাকৃত ভাষা বা মৈথিলী ভাষার প্রভাবে ষ>খ তে রূপান্তরিত। যেমন : বিষ >বিখ,নিমেষ>নিমেখ,ঔষধ > ঔখদ, পুরুষ >পুরুখ প্রভুতি।
এই কাব্য বিভিন্ন রাগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন – মালসী, ধানসী,ভাটিয়াল,পাটমঞ্জুরী প্রভৃতি।
পয়ার, এিপদী ছন্দকেই কবি কাব্য বেশি ব্যবহার করেছেন। যেমন : পয়ার ছন্দ—-
পশ্চিম দিকের রাজা / আছিল প্রাধান। ৮/৬
নৃপতি তৈমুছ নামে /ইন্দ্রের সমান। ৮/৬
- অলংকার ব্যবহারে কবি সগীর-এর পান্ডিত্য প্রকাশিত হয়েছে। যেমন–
যুগল নয়ন জ্যোতি চন্দ্র সূর্য তুল।
জগৎ জিনিআ আঁখি বিশাল বিপুল।
- মুহম্মদ সগীর বাইবেল,কোরাণ থেকে কাহিনি চয়ন করলেও বাংলার প্রকৃতি পরিবেশ ও সমাজ বর্ণনায় বাস্তবতার পরিচয় রেখেছেন।
- ‘জোলেখার বারমাসী’ অংশে প্রকৃতি ও মানব মনস্তত্ব মিশে গিয়েছে। যেমন,
নানা বর্ণ ফলবর্গ জেহেন নক্ষত্র স্বর্গ কনক কটোরা মধুপুর।
তরুসব সুচরিত জীবন্ত হরষিত বিরহিণী হেরি কাম ভোর।।
- মধ্যযুগের গতানুগতিক দেববাদভিওিক বাংলা সাহিত্য সগীরের ‘ইউসুফ -জোলেখা ’ মানব-মানবীর রোমান্টিক প্রেম কাব্য হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।