Menu

ভক্তিরত্নাকর | নরহরি চক্রবর্তী

Last Update : January 2, 2022

ভক্তিরত্নাকর | নরহরি চক্রবর্তী

 

দুই নামে একই ব্যক্তি

বৈষ্ণবধর্মের সমাজ ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক উপাদান গ্রন্থরূপে ভক্তিবাকর এক স্মরণীয় রচনা। পঞ্চাদশ তরঙ্গে বিভক্ত এই গ্রন্থের বিষয় ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ পর্যন্ত দু’শ বছরের বৈষ্ণব সমাজ ও সম্প্রদায়ের বিবরণদান। তার মধ্যে আবার পঞ্চম তরঙ্গে আছে মার্গ সঙ্গীতের বিশেষ উপস্থাপনা। গ্রন্থকার নরহরি চক্রবর্তী ও ঘনশ্যাম দাস নামে একই ব্যক্তি। কবির নিজস্ব জবানীতেই ধরা পড়ে সংশয়ের সুর,

না জানি কি হেতু হৈল মোর দুই নাম।

নরহরি দাস আর ঘনশ্যাম।

এই ‘ঘনশ্যাম’ বৈষ্ণব পদকার হিসাবেই পরিচিত (যদিও গোবিন্দদাস কবিরাজের পৌত্র পদকার ঘনশ্যাম দাসও ছিলেন)। গ্রন্থটি অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগে, ১৬৯৪-এর পরে রচিত হয়।

আরো পড়ুন--  রামাই পণ্ডিতের শূন্যপুরাণ

 

গ্রন্থের বিষয়

‘ভক্তিরত্নাকর’ গ্রন্থে তিন ‘প্রভু’, ছয় ‘গোস্বামী’ এবং শ্রীনিবাস-নরোত্তম-শ্যামানন্দ-বীরচন্দ্র প্রমুখ পরবর্তী বৈষ্ণব আচার্যদের প্রসঙ্গ যেমন বর্তমান, তেমনি বৃন্দাবনের গোস্বামীদের রচিত গ্রন্থের বিবরণ, গৌড়ে প্রেরিত গ্রন্থ-সংবাদ, রাজা হাম্বীরের গ্রন্থ লুঠ, শ্রীনিবাসের উদ্ধার, রাজার সপরিবারে দীক্ষাগ্রহণ, আচার্যের দ্বিতীয় বিবাহ ও প্রতিক্রিয়া, খেতুরী মহোৎসব প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটনার পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা গ্রন্থ থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি, ‘সঙ্গীতপারিজাত’, “সঙ্গীতসার’, ‘সঙ্গীতদামোদর’ প্রভৃতি নানা গ্রন্থ অবলম্বনে গানের স্বর, তাল, গ্রাম, মূৰ্চ্ছনা, রাগরাগিণী, বাদ্যযন্ত্র, নৃত্য, অঙ্গাভিনয় ইত্যাদি প্রসঙ্গের অনুপুঙ্খ আলোচনা এই গ্রন্থের মধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়েছে; যেমন এখানে আছে সালগ বা ছায়ালগ রাগে অন্ত্যানুপ্রাস বর্ণনা,

শুদ্ধ সালগের প্রায় ক্ষুদ্রগীত হয়।

অন্ত্যানুপ্রাস প্রশস্ত শাস্ত্ৰেতে কহয়॥

 

আরো পড়ুন--  ভক্তিরসামৃতসিন্ধু - শ্রীরূপ গোস্বামী

গুরুত্ব

গ্রন্থটি বৈষ্ণব সমাজ-ধর্ম-শাস্ত্রের প্রায় বৃহৎ কোষগ্রন্থ বলা যায়। ‘ভক্তিরত্নাকরে’ তথ্য-উৎস সবই যে প্রামাণিক একথা বলা যায় না। বলা যায় না, গ্রন্থকার কতখানি ভক্তিভাবুক আর কতটা যুক্তিজাগর মনোভঙ্গির দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। প্রায় চৈতন্যচরিতামৃতে’র আদর্শে এই বিশাল গ্রন্থের পরিকল্পনা। কিন্তু কৃষ্ণদাস কবিরাজের রচনার মতো গোছানো নয়। ঘটনা, চরিত্র ও তত্ত্বকথা সব মিলেমিশে একাকার। প্রসঙ্গের দীর্ঘায়ত বিন্যাসে পর্যায়ক্রম সর্বত্র রক্ষিত হয়নি। ভাষাও অনেকক্ষেত্রে নীরস এবং কাব্যিক আবেদন জাগরণে অক্ষম।

আরো পড়ুন--  ভারতচন্দ্রের রচনাবলী

 

কবি-পরিচিতি

বৈষ্ণব স্বভাবজাত বিনয়ে গ্রন্থকার নিজের সম্পর্কে আশ্চর্যভাবে মিতবাক্। তাঁর পিতা জগন্নাথ ছিলেন বৃন্দাবন নিবাসী বিখ্যাত বৈষ্ণব বিশ্বনাথ চক্রবর্তী শিষ্য। কবির বাসস্থান ছিল গঙ্গার পূর্ববর্তী সৈয়দাবাদের নিকটে। অল্পবয়সেই নরহরি গৃহ ছেড়ে বৃন্দাবন যান। এই গ্রন্থে নরহরির স্বরচিত এবং অপরের বহু পদ উদ্ধৃত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!