Last Update : January 15, 2022
কবি জয়ানন্দের পরিচিতি ও তাঁর কাব্য চৈতন্যমঙ্গল এর সম্পূর্ণ পরিচয়
কবি পরিচিতি
জয়ানন্দের বাসস্থান মধ্যরাঢ়ের আমাইপুরা গ্রাম। পিতা সুবুদ্ধি মিশ্র, মাতা রোদনী। নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে, ১৫১১ বা ১৫১৩ খ্রীস্টাব্দে কবির জন্ম হয়।
চৈতন্যমঙ্গল কাব্যের প্রাথমিক পরিচয়
কবি জয়ানন্দ তার ‘চৈতন্যমঙ্গল‘ গ্রন্থটি গান করার উদ্দেশ্যে যেন রচনা করেছেন। ড. বিমানবিহারী মজুমদারের মতে, ১৫৬০ খ্রীস্টাব্দের নিকটবর্তী সময়ে কাব্যটি লেখা হয়। নয়টি খণ্ডে গ্রন্থটির আরম্ভ ও অবসান। ধ্রুবচরিত্র, জড়-ভরতের কথা, ইন্দ্রদুম্ন রাজার জগন্নাথ প্রতিষ্ঠার পৌরাণিক বিবরণ থাকলেও তা সংক্ষিপ্ত।
চৈতন্যমঙ্গল কাব্যে বর্ণিত কাহিনি
তাঁর গ্রন্থের আদিখণ্ডে পৌরাণিক প্রসঙ্গ, নদীয়া খণ্ডে জন্ম বর্ণনা থেকে জগাই-মাধাই উদ্ধার, বৈরাগ্যখণ্ডে সন্ন্যাস গ্রহণের ইচ্ছা-উদ্ভব পর্যন্ত, সন্ন্যাসখণ্ডে সন্ন্যাসগ্রহণ ও শাস্তিপুরে অদ্বৈত গৃহে আগমন, উৎকল খণ্ডে নীলাচলে যাত্রা, প্রকাশখণ্ডে নীলাচল-মাহাত্ম্য ও চৈতন্যের নীলাচলে স্থিতি, তীর্থখণ্ডে বৃন্দাবন মথুরা ও দক্ষিণ ভারতে তীর্থভ্রমণ, বিজয়খণ্ডে মহাপ্রভুর গৌড়দেশে গমন, নিত্যানন্দ প্রভুর নীলাচল গৌড়ে স্থিতি, উত্তরখণ্ডে গ্রন্থের “অনুবাদ”, মহাপ্রভুর তিরোভাব ও ভক্তদের শোক, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতের দেহত্যাগের উল্লেখ আছে।
গ্রন্থের সমস্ত ঘটনাগুলির মধ্যে সর্বত্র শৃঙ্খলা বিরলদৃষ্ট। জয়ানন্দের কাব্যের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য— (১) কৃত্তিবাস বন্দনা, (২) চৈতন্যের দেহত্যাগ বর্ণনা। তাঁর মতে, আষাঢ় পঞ্চমীতে রথযাত্রার সময়ে চৈতন্যদেবের “ইটাল বাজিল বাম পাএ আচম্বিতে।” আর তার ফলেই টোটা গোপীনাথের মন্দিরে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
বিষ্ণুপ্রিয়ার বারোমাসের বিরহবর্ণনার মধ্য দিয়ে গীতিকবিতার স্পন্দন অনুভূত হয়—
“চৈত্রে চাতক পক্ষী পিউ পিউ ডাকে
শুনিঞা যে প্রাণ করে তা কহিব কাকে।…
ও গৌরাঙ্গ প্রভু হে,
তোমার নিদারুণ হিয়া
গঙ্গাএ প্রবেশ করি মরু বিষ্ণুপ্রিয়া।”…
চৈতন্যমঙ্গল সার্থক জীবনীকাব্য কিনা
কিন্তু তবু কবিত্ব শক্তির কল্পনা বিলাস না থাকায় ও মহাপ্রভুর বহিরঙ্গে ভক্তজনের সঙ্গে নাম সঙ্কীর্তনের ছবি এখানে দুর্লভ বলে এ গ্রন্থ সার্থক জীবনীকাব্যের দাবী হতে বঞ্চিত হয়।