Last Update : December 25, 2021
জাগরণ পালা | সাহিত্য টীকা
সারারাত জেগে নৃত্যগীতের যে অনুষ্ঠান করা হত, মধ্যযুগের বঙ্গদেশে সাধারণত তাকেই ‘জাগরণ’ বা ‘জাগের গান’ বলা হতো। এই জাতীয় গানের মধ্যে উত্তরবঙ্গের ধামালী গান এবং ঝুমুর গানের নাম উল্লেখ করা যায়। এই গানগুলির যে অংশ গভীর রাতে না ঘুমিয়ে পড়ে ভোর পর্যন্ত গাওয়া হতো, তাকেই বলা হতো জাগরণ পালা। ধামালী গানের মধ্যে ‘রাধার নাক তোলা পালা’, ‘কৃষ্ণের মাছধরা পালা’ প্রভৃতিকে জাগের গান বলে উল্লেখ করা যায়। এই পালাগানগুলির বৈশিষ্ট্য হলো, লৌকিক গল্প বা কাহিনি হালকা সুরে অশ্লীল ভঙ্গিতে গভীর রাতে গাওয়া হতো।
মঙ্গলকাব্যের আসরেও জাগরণ পালাগানের প্রচলন ছিল। মঙ্গলকাব্যের অনেকগুলির পালা ছিল ‘অষ্টমঙ্গলা’ অর্থাৎ আট দিন ধরে গাওয়া হতো। পূর্ববঙ্গে এর নাম ছিল ‘রয়ানী’ গান। এর কোনো অংশ রাতে গাইবার জন্য নির্বাচিত হলে তাকেই ‘জাগরণ পালা’ বলা যায়। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে শ্রীমন্ত সদাগরের ‘মশান’ কাহিনিটি জাগরণ পালা পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। অনুরূপভাবে, মনসামঙ্গল কাব্যে ‘লখীন্দরের পুনর্জীবন লাভ’ এবং ধর্মমঙ্গল কাব্যে লাউসেনের ‘পশ্চিমে সূর্যোদয় জাগরণ’ কাহিনিও এই পালাগানের মধ্যে পড়ে।
সুকুমার সেন লিখেছেন, “চণ্ডীমঙ্গল,মনসামঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল প্রভৃতি পাঞ্চালী কাব্যের উপাখ্যানের ক্লাইম্যাক্স থাকে উপসংহারের ঠিক আগের কাহিনিতে। কাব্যের পক্ষে এটি সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা। এই অংশটি সারারাত ধরিয়া গাওয়া হইত বলিয়া এই পালার নাম জাগরণ”। তাঁর মতে “চাটিগাঁ প্রভৃতি অঞ্চলে চণ্ডীমঙ্গলের নামান্তর ‘জাগরণ’। (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস । প্রথমার্ধ)