Menu

রামরাম বসু ১৭৫৭-১৮১৩

Last Update : December 24, 2021

রামরাম বসু দীর্ঘকাল ইংরেজ মিশনারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে কেরি সাহেবের বাংলা শিক্ষক এবং মুনসি হিসেবে তিনি শ্রীরামপুর মিশনে বেশ কিছুকাল অবস্থান করেছিলেন। মিশন-প্রচারিত গ্রন্থাবলীর অনুবাদরচনা ও সম্পাদনায় তাঁর কিছু ভূমিকা থাকা সম্ভব। অবশেষে তাঁর সাক্ষাৎ পাই ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের শিক্ষক হিসেবে। কেরির উৎসাহে তিনি বাংলা ভাষায় গ্রন্থ প্রণয়নে অগ্রসর হলেন। তাঁর রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র ১৮০১ সালে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। এটিই বঙ্গাক্ষরে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম মুদ্রিত মৌলিক গ্রন্থ। তবে এই ঘটনাটি যতটা আকস্মিক ততটা তাৎপর্যবহ নয়। তাঁর বই প্রথম মুদ্রিত হলেও তাকে শ্রেষ্ঠ গদ্য লেখক বলার অবকাশ নেই। বরং কলেজের প্রধান তিনজন প্রকারের মধ্যে রামরাম বসুর ভূমিকা সর্বাপেক্ষা ক্রুটিপূর্ণ। বাংলা গদ্যরীতির মুক্তির পথটি তিনি খুঁজে পাননি।
 

 

গ্রন্থাবলী ও ভাষারীতি

 
রামরাম বসুর গদ্যগ্রন্থ দুটি। রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র (১৮০১) এবং  লিপিমালা (১৮০২) ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র গ্রন্থটির বিষয়বস্তু নানা ফারসি গ্রন্থ এবং কিংবদন্তি থেকে সঙ্কলিত। এ গ্রন্থে প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস বলার চেষ্টা হয়েছেবিষয়বস্তু গালগল্প রচনার যুগে কিঞ্চিৎ অভিনব সন্দেহ নেই। সেকালে ঐতিহাসিক নিষ্ঠা ও দৃষ্টিভঙ্গি বা তথ্য সব কিছুই ছিল দুর্লভ।
 
লিপিমালা‘ নানা বিষয়ে লেখা চিঠির সংকলন। পত্রের আকারে নানা পৌরাণিক  লৌকিক কাহিনিও বিবৃত হয়েছে। চৈতন্যদেবের জীবনকথাও পাওয়া যায়। কিন্তু ফারসি পদ্ধতিতে শিক্ষিত মুনসী রামরাম বাংলা ভাষার স্বাভাবিকত্ব ফারসি শব্দের বাহুল্যে অনেকটা নষ্ট করেছেন। যেমন-
 
যে কালে দিল্লির তক্তে হোমাঙু বাদসাহ তখন ছোলেমান ছিলেন কেবল বঙ্গ ও  বিহারের নবাব পরে হোমাঙু বাদসাহের ওফাত হইলে হেন্দোস্তানে বাদশাহ হইতে ব্যাজ হইল এ কারণ হোমাঙু ছিলেন বৃহৎ গোষ্ঠি তাহার অনেকগুলিন সন্তান তাহারদের আপনারদের মধ্যে আত্মকলহ হইয়া বিস্তর বিস্তর ঝগড়া লড়াই কাজিয়া উপস্থিত ছিল ইহাতে সুবাজাতের তহশিল তাগাদা কিছু হইয়াছিল।
 
পদবিন্যাসরীতির বিশৃঙ্খলাও এ ভাষার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। তার উপরে রয়েছে অশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার। তবে মাত্র এক বৎসর পরে লেখা লিপিমালার ভাষা বেশ সরল। যেমন :
 
কন্যে তুমি কিমর্থে এখানে আসিয়াছ তোমার স্বামী ভূতের পতি শ্মশানে মসানে তাহার অবস্থিতি হাড়মালা গলায় সাপ লইয়া তাহার খেলা বাদিয়ার বেশ তোমার কপাল মন্দ অতএব এমত ঘটনা তোমাকে হইয়াছে আমি তাহাকে নিমন্ত্রণ করিলাম না
 
উপযুক্ত স্থানে যতি বসিয়ে পড়লে দেখা যায় পূর্ববর্তী গ্রন্থের তুলনায় তার এই পত্র-সঙ্কলনে পদবিন্যাস অনেক স্বাভাবিক হয়ে এসেছেফারসি শব্দের অকারণ আধিক্য একেবারে লোপ পেয়েছে। সম্ভবত সামনে কোনো আদর্শ না থাকায় প্রতাপাদিত্য চরিত্রের ভাষা সম্বন্ধে তিনি মনস্থির করতে পারেননি। কিন্তু প্রতাপাদিত্য ও লিপিমালা প্রকাশের মধ্যে কথোপকথন (কেরি সংকলিত এবং সম্ভবত মৃত্যুঞ্জয় লিখিত) এবং মৃত্যুঞ্জয়ের বত্রিশ সিংহাসন লিখিত হয়েছে। ফলে গদ্য ভাষার একটা আদর্শ তিনি সামনে পেয়েছেন। সেই আদর্শ অনুসরণে রামরাম বসু সাফল্য দেখিয়েছেন। এখানেই কলেজের অন্যান্য শিক্ষক-গ্রন্থকারের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য। রামরাম বসু গদ্য-ভাষার পথ তৈরি করতে সমর্থ হননিকিন্তু স্বচ্ছন্দ গতিতে পথ চলেছেন। এর মূল্যও অনস্বীকার্য।
 
——————————————————-
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

আরো পড়ুন--  সোমপ্রকাশ পত্রিকা ১৮৫৮
——————————————————-
সাহায্য- ক্ষেত্রগুপ্ত
——————————————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!