Menu

সবুজ পত্র ১৯১৪

Last Update : December 28, 2021


সবুজ পত্র ১৯১৪

 

আবির্ভাব

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে ভ্রমণ শেষে রবীন্দ্রনাথের আশাবাদী-কল্যাণবাদী মন যুদ্ধের মধ্যেই প্রত্যাশা করেছিলেন শুভ প্রভাতের সম্ভাবনা। যুদ্ধ তাঁর কাছে জড়তা ও অশুভ অন্ধকার থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল। রবীন্দ্রনাথ ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণপর্বে ‘গীতাগুলি’র (১৯১০ খ্রিঃ) বাণী ও ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সাধনা’ প্রকাশের মতোই প্রমথ চৌধুরীকে দিয়ে ‘সবুজ পত্র’ প্রকাশ বা বাংলা সাহিত্যে সবুজের অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

 

সম্পাদক, প্রকাশকাল, পরিচিতি

‘বীরবল’ ছদ্মনামধারী প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজ পত্র’ একখানি মাসিক পত্রিকা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ২৫শে বৈশাখ, ১৩২১ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে কলিকাতায় ‘সবুজ পত্র’ বিজ্ঞাপন, পাঁচ মিশালী সংবাদ আলোচনা বিবর্জিত পত্রিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

উদ্দেশ্য

সাহিত্যে গণচেতনা ও জন-অধিকার, রচনার ক্ষুদ্রত্ব, সাহিত্য সেবা, বেনিয়াবৃত্তির উপায়, কৃত্রিমতা ও ভাবাবেগের তারল্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে পত্রিকাটি রচিত। মননশীল সাহিত্য রচনার মহৎ আদর্শ সৃষ্টি করার জন্যও পত্রিকাখানি প্রকাশ করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন--  সম্বাদ কৌমুদী ১৮২১

 

অবদান/গুরুত্ব

বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে ‘সবুজ পত্র’ এক নতুন পর্বের দিকনির্দেশক। প্রমথ চৌধুরী সবুজ পত্রের সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা। ‘সবুজ পত্রে’র লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এছাড়াও অতুলচন্দ্র গুপ্ত, কিরণশংকর রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব ‘সবুজ পত্র’ পত্রিকার মধ্যে বিদ্যমান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত ‘সবুজের অভিযান’ কবিতা নিয়ে ‘সবুজ পত্র’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা উদ্বোধন করেন। রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও সমাজচিত্তা বিষয়ক কিছু প্রবন্ধ ‘কালান্তর’ গ্রন্থে ‘বাতায়নিকের পত্র’ নামক প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছিল। এবং তা সবুজ পত্রেও প্রকাশিত হয়েছিল। র নাথের কয়েকটি ছোটগল্পও সবুজ পত্রে প্রকাশিত হয়। গল্পগুলি হল—‘অপরিচিতা’, ‘হৈমন্তী’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘পয়লা নম্বর’ প্রভৃতি।

 

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা ভাষাতত্ত্ব সম্বন্ধীয় প্রথম বাংলা প্রবন্ধটি সবুজ পত্রে প্রকাশিত হয়। অতুলচন্দ্র গুপ্তের ‘কাব্যজিজ্ঞাসা’ নামক গ্রন্থের অলংকারশাস্ত্র সম্বন্ধীয় প্রবন্ধগুলি সবুজ পত্রতে প্রকাশিত হয়। মননশীলতা, প্রকাশভঙ্গির বক্রতা, বৈদগ্ধ্য, বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সবুজ পত্র অনেকদিন ধরে বাঙালি রসগ্রাহীদের খোরাক জুগিয়েছিল। ফলে ‘সবুজ পত্র’র নবসাহিত্য বাঙালি বা ভারতীয় চরিত্রের সীমাবদ্ধতা ত্যাগ করে নির্মোহ বিশুদ্ধ চিন্তা অর্জন করতে পেরেছিল।

আরো পড়ুন--  শনিবারের চিঠি ১৯২৪

 

‘সবুজ পত্র’ ভাষার ক্ষেত্রে যে নতুন আন্দোলন উপস্থিত করেছিল, তা হল চলিত ভাষার একচ্ছত্র অধিকার। অমার্জিত কথ্যবুলিকে প্রমথ চৌধুরী গ্রহণ করেননি। তাঁর চলিত ভাষা ছিল মার্জিত পরিশীলিত বিদগ্ধ মনের প্রতিফলন। প্রমথ চৌধুরী তথা ‘সবুজ পত্র’র চলিত ভাষারীতির আবাহনকে রবীন্দ্রনাথ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন। ‘সবুজ পত্র’র পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের দুটি উপন্যাস (‘ঘরে বাইরে’ ও ‘চার অধ্যায়’) প্রকাশিত হয়েছিল, তার ভাষাও ছিল চলিত রীতির অনুসারী। ‘সবুজ পত্র’র সর্বাপেক্ষা বড় কৃতিত্ব হল, চরিত্রধর্ম ও ভাষারীতির দিক থেকে পত্রিকাটি রবীন্দ্রনাথকে প্রভাবিত করেছিল।

আরো পড়ুন--  অশনি সংকেত ১৯৫৯ খ্রি.

 

সুতরাং ‘সবুজ পত্র’র নবসাহিত্য আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে ছিল যৌবনের শক্তি। প্রমথ চৌধুরী ‘প্রাণয়ে স্বাহা’ বলে সবুজ পত্রের সূচনা করেছিলেন। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই রবীন্দ্রনাথ ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় জয়গান গেয়েছেন। এবং যৌবনের প্রাণধর্মই ছিল সবুজ পত্রের চালিকাশক্তি। তাই সবদিক থেকে সাহিত্যরসিক সমাজে, সমাজের উচ্চতর চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও তৎকালীন আধুনিক বাঙালিদের কাছে প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজ পত্র’ বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র ধারার প্রবর্তক।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
সাহায্য : দেবেশকুমার আচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!