রামায়ণের অনুবাদক কৃত্তিবাসের আবির্ভাব কাল
‘কৃত্তিবাস কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলংকার’—কৃত্তিবাস সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদনের এই স্তুতি যথার্থ। তিনি অনুবাদ সাহিত্যের আদি কবি। কৃত্তিবাসের আত্মপরিচয় থেকে তাঁর পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী প্রভৃতির পরিচয় জানা যায়।
কবির পূর্বপুরুষের বাস ছিল পূর্ববঙ্গ, কিন্তু সে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাতীরের নদীয়া জেলায় ফুলিয়া গ্রামে বসবাস করেন। কৃত্তিবাসের পিতা বনমালী। কৃত্তিবাসের ছয় ভাই, এক বোন। এঁরা মুখোপাধ্যায় উপাধি হলেও ওঝা উপাধিতেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
দীনেশ চন্দ্র সেনের গ্রন্থে উদ্ধৃত কৃত্তিবাসের আত্মবিবরণীর মধ্যে আছে–
আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পুণ্য (পূর্ণ) মাঘ মাস
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।।
এই শ্লোক অনুযায়ী মাঘ মাসের রবিবার শ্রীপঞ্চমী তিথি ছিল ১৩৫২, ১৩৭২, ১৩৭৫ এবং ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দ। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি জ্যোতিষ গণনার দ্বারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, ১৪৩২ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই ফেব্রুয়ারি রবিবার রাত্রিতে কৃত্তিবাসের জন্ম। গোপাল হালদার মনে করেন, ১৪৩২ নয়, ১৪০৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম এবং এই সময়ে গৌড়েশ্বর ছিলেন সম্ভবত গণেশ বা দনুজমর্দনদেব।
অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায় কৃত্তিবাসের জন্মকাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, ধ্রুবানন্দের ‘মহাবংশাবলী’ প্রভৃতি থেকে তথ্য প্রমাণ হাজির করে কৃত্তিবাসের আবির্ভাব কাল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি রবিবার। ঐতিহাসিক কানু পিল্লাইও এই মত পোষণ করেন। এই সময়ের রাজা ছিলেন রুকনুদ্দিন বরবক্শাহ, যার সময়ে সভাকবি ছিলেন কৃত্তিবাস।
আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, কৃত্তিবাস শৈশব থেকে পড়াশোনায় দক্ষ ছিলেন। এগারো-বারো বছর বয়সে কবি গঙ্গানদী পার হয়ে উত্তরবঙ্গে গুরুগৃহে যাত্রা করেন। শিক্ষা শেষ করে কবি রাজপণ্ডিত হওয়ার অভিপ্রায়ে গৌড়ের রাজসভায় উপস্থিত হন–
রাজপণ্ডিত হব মনে আশা করে।
পঞ্চশ্লোক ভেটিলাম রাজা গৌড়েশ্বরে।।