Last Updated on January 15, 2022 by বাংলা গাইড
কবি লোচনদাসের পরিচয় চৈতন্যমঙ্গল কাব্যের পরিচয় কবির প্রতিভা
চৈতন্যমঙ্গল কাব্য
“নদীয়া-নাগর-ভাবের” উপাসক নরহরি ঠাকুরের স্তাবক কবি লোচনদাসের কাব্যটির নাম ‘চৈতন্যমঙ্গল‘। রাগরাগিণীর স্বরঝঙ্কারে এ কাব্যের কাহিনীপট ঝঙ্কৃত। ফলে জীবনী-কাব্যের আসরে এক গীতি-আলেখ্য রচনার প্রয়াস এখানে লক্ষ্যণীয়। তাই এখানে অধ্যায় পরিচ্ছেদ অনুপস্থিত। শুধুমাত্র সূত্রখণ্ড, আদিখণ্ড, মধ্যখণ্ড, শেষখণ্ড নামে চারিটি খণ্ড আছে।
চৈতন্যমঙ্গল কাব্যের কোন খণ্ডে কী আছে
সূত্রখণ্ডের বিষয় অবতারের স্বরূপ-নির্ণয়, আদিখণ্ডে আছে গয়াগমন পর্যন্ত বর্ণনা, মধ্য খণ্ডে নীলাচলে বাসুদেব সার্বভৌমের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন, শেষখণ্ডে তীর্থযাত্রার বর্ণনা, প্রতাপকদ্রের প্রতি অনুগ্রহ, মহাপ্রভুর তিরোধানে হয়েছে কাব্যের পূর্ণচ্ছেদ।
কবি লোচনদাসের জন্মকাল জন্মস্থান
লেখকের জন্মস্থান বর্ধমান জেলার কোগ্রাম। পিতা কমলাকর, মাতা সদানন্দী। গ্রন্থরচনার কাল সংশয়াচ্ছন্ন। আনুমানিক ১৫৬০-১৬৭০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে লোচনের কাব্যটি রচিত হয়েছিল।
কবিত্বশক্তি
অসংখ্য খণ্ডবিচ্ছিন্ন মুহূর্তকে, জীবনের কথাকে জীবনীরসে সমৃদ্ধ করার মধ্যে লোচনের কবিত্ব-শক্তির পরিচয় পরিলক্ষিত হয়। যেমন, নির্বাসিত কামনার বেদনায় বিরহিণী বিষ্ণুপ্রিয়ার জীবনচ্ছবি মাত্র দু‘একটি কথার মধ্য দিয়ে রেখায়িত হয়েছে :
“হলুদ বাটিতে গোরি বসিলা যতনে
হলুদ বরণ গোরাচাদে পড়ে গেলা মনে।”
তবু ইতিহাসাশ্রিত কবিতার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিচার করলে লোচনদাসের গ্রন্থের ত্রুটি দৃষ্টি এড়ায় না। গৌড়নাগরী মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর ধ্রুব লক্ষ্য। তাই চৈতন্যজীবনের সার্থক ভাষ্যকার না হলেও ড. বিমানবিহারী মজুমদারের ভাষায়,
“বৈষ্ণব ধর্মের ইতিহাসে লোচনের গ্রন্থ খুব মূল্যবান, কেননা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের একটি শাখার উপাসনা ও ভাব-সাধনা-প্রণালীর বিশদ ও অকৃত্রিম বিবরণ ইহাতে পাওয়া যায়।”