Menu

বারমাস্যা বা বারমাসী

Last Updated on December 25, 2021 by বাংলা গাইড

বারমাস্যা বা বারমাসী

 

‘বারমাস্যা’ বা ‘বারমাসী’ কথাটির অর্থ বারো মাস, অর্থাৎ একটা গোটা বৎসরের বিবরণ। প্রাচীন সাহিত্য বা মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে লৌকিক কাহিনী বর্ণনায় নায়ক-নায়িকার বারো মাসের সুখ-দুঃখের বিবরণ আছে। মঙ্গলকাব্যে এটি এক বিশেষ লক্ষণ বা রীতি হয়ে উঠেছে।

‘বারমাসী’ কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য হল :

(১) বারো মাস এবং ছয় ঋতুর আবর্তনের মধ্য দিয়ে মানবচিত্তের যে রূপান্তর হয়, সমাজজীবনের যে বিবর্তন ঘটে তার পরিচয় এই জাতীয় কবিতার মধ্যে প্রকাশ পায়।

আরো পড়ুন--  ভক্তিরসামৃতসিন্ধু - শ্রীরূপ গোস্বামী

(২) এর মাধ্যমে ভারতীয় কবিমানসের বৈশিষ্ট্য জাতির লোকজীবনের স্বরূপ, লোকসাহিত্যের প্রতিফলন এবং ধর্মসংস্কৃতির ও সমাজবোধের উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টতা লক্ষিত হয়।

(৩) বারমাস্যা বর্ণনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র, নারীচরিত্রের মনস্তত্ত্ব, ভাষা ও সাহিত্যচর্চার উৎকর্ষের দিকগুলি ফুটে ওঠে।

(৪) ‘বারমাসী’ শব্দটি অনেক সময় ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ছয় মাস, আট মাস বা দশ মাসের সুখদুঃখ বর্ণনাকেও ‘বারামাসী’ বলা হয়ে থাকে।

(৫) বিষয়গত দিক থেকে নারীর দাম্পত্যজীবনের দুঃখ বর্ণনাই বারমাস্যার প্রধান উপজীব্য। তবে সুখের চিত্র, বিরহিনী প্রেমিকার বিলাপ ও বারমাস্যার বিষয় হয়ে থাকে। বারমাসী কবিতাগুলি প্রধানত নারী জীবনাশ্রিত। সেই তুলনায় পুরুষের বারমাসী বিষয়ক কবিতার সংখ্যা খুবই কম।

আরো পড়ুন--  ভক্তিরত্নাকর | নরহরি চক্রবর্তী

প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যে ভারতবর্ষের প্রায় সব আঞ্চলিক ভাষাতেই বারমাসী কবিতা আছে। বাংলা মঙ্গলকাব্যগুলিতে বেহুলা, লহনা, খুল্লনা, সুশীলা, ফুল্লরা প্রভৃতি নায়িকার বারমাস্যার কাহিনী আছে। দৌলত কাজীর কাব্যে সতী ময়নার বারমাস্যার চিত্র আছে। অনুবাদ সাহিত্যেও সীতা, দ্রৌপদীর বারমাস্যার বর্ণনা দেখা যায়। এর প্রভাবে বৈষ্ণব সাহিত্যে রাধা, বিষ্ণুপ্রিয়া এমনকি, গৌরাঙ্গের বারমাসী বর্ণনাও ‘গৌরাঙ্গবাদে’র কবিরা বর্ণনা করেছেন। ময়মনসিংহ গীতিকার নায়িকা মহুয়া, মলুয়া, কমলা, লীলা প্রভৃতির বারমাসী উল্লেখযোগ্য। সুতরাং বলা চলে মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যে ‘বারমাসী’ বা বারমাস্যা একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দেখা দিয়েছিল।

আরো পড়ুন--  আর্যাতর্জা কী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!