Menu

ভক্তিরসামৃতসিন্ধু – শ্রীরূপ গোস্বামী

Last Update : January 15, 2022

ভক্তিরসামৃতসিন্ধু

 

শ্রীচৈতন্যের স্নেহধন্য শ্রীরূপ গোস্বামী (হুসেন শাহের কর্মচারী দবীর খাস)-র বৈষ্ণব রসশাস্ত্র সম্পর্কিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’। এই গ্রন্থ প্রমাণ করে, শ্রীরূপ ছিলেন একজন বিশিষ্ট কবি ও রসশাস্ত্রের বোদ্ধা। তাঁর এই গ্রন্থের দ্বারা বৈষ্ণব সমাজ তো বটেই, সেইসঙ্গে সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীর বৈষ্ণব পদকর্তারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। জীব গোস্বামী এই গ্রন্থের টীকা রচনা করে নাম দেন ‘দুর্গমসঙ্গমণি’

ভক্তিরসামৃতসিন্ধু চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক ভাগে আবার অনেকগুলি লহরী বা উপ-পরিচ্ছেদ আছে। বিভাগগুলি হল – পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর।পূর্ব বিভাগে চারটি লহরী। এই লহরীগুলিতে ‘সামান্য ভক্তি’, ‘সাধন ভক্তি’, ‘ভাব ভক্তি’ ও ‘প্রেমভক্তি’ বর্ণিত। পরের বিভাগগুলিতে ভক্তি রসের স্বরূপ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন--  বারমাস্যা বা বারমাসী

‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’-র প্রথম তিন শ্লোকে যথাক্রমে রাধাকান্ত কৃষ্ণের, চৈতন্যের ও গুরু সনাতনের বন্দনা রয়েছে। চৈতন্যবন্দনায় শ্রীরূপ চৈতন্যদেবকে হরির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এই গ্রন্থে শ্রীরূপ দেখিয়েছেন প্রেমভক্তি কেন সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্তি। তিনি ভক্তিরসকে সমস্ত স্থায়িভাবের মূলমন্ত্র বলে গ্রহণ করে কৃষ্ণরতিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে, ভক্তিরস দু-ধরনের – পাঁচটি মুখ্য ভক্তিরস এবং সাতটি গৌণ ভক্তিরস। মুখ্য ভক্তিসগুলি হল—শান্ত, প্রীতি, অদ্ভুত, বাৎসল্য, মধুর এবং গৌণ ভক্তিসগুলি হল—হাস্য, অদ্ভুত, বীর, করুণ, রৌদ্র, ভয়ানক, বীভৎস।

এই গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল – শ্রীরূপ গোস্বামী বৈষ্ণব ভক্তিকে রস রূপে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্য, মননশীলতা ও যুক্তিবোধ দিয়ে যেভাবে ভক্তিরসের আলংকারিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা বিস্ময়কর। ফলে তাঁর এই ব্যাখ্যার উপর গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের ভিত্তিভূমি অনেকটা গড়ে উঠতে পেরেছিল।

আরো পড়ুন--  বাইশা বা বাইশ কবির মনসামঙ্গল

ভক্তিরস একটা শাস্ত্র। রসশাস্ত্র একটা বিজ্ঞান। ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রীচৈতন্যদেবের সমসাময়িক রঘুমণি যেমন মিথিলার গৌতমীয় প্রাচীন ন্যায় ভেঙে বাঙালির নব্যন্যায় উদ্ভাবন করেছিলেন তেমনি শ্রীচৈতন্যদেব প্রাচীন রসশাস্ত্রের উপর বাঙালির নূতন রসশাস্ত্র সৃষ্টি করে গেছেন। এই রসসৃষ্টিই ভগবানের সঙ্গে জীবের যত রকম সম্বন্ধ তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। শ্রীচৈতন্য শ্রীরূপকে এই রসশাস্ত্র সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন যার উল্লেখ পাই ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-এ

পারাবারশূন্য গম্ভীর ভক্তিরসসিন্ধু।

তোমা চাখাইতে তার কহি একবিন্দু।

(মধ্যলীলা, উনিশ পরিচ্ছেদ)

শ্রীরূপ গোস্বামী ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’-তে ভক্তিরসের সেই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন। প্রভু শ্রীচৈতন্য শ্রীরূপকে এই ভক্তি সম্বন্ধে বলেছিলেন –

শান্ত দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর রস নাম।

কৃষ্ণ ভক্তি রস মধ্যে পঞ্চপ্রধান।।

(চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, উনিশ পরিচ্ছেদ)

ভক্তিরসের ব্যাখ্যায় শ্রীরূপ গোস্বামীর বিশ্লেষণ বৈষ্ণব সমাজে ও সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এই গ্রন্থটির অপরার্ধ হল ‘উজ্জ্বলনীলমণি’ গ্রন্থ।

আরো পড়ুন--  ভক্তিরত্নাকর | নরহরি চক্রবর্তী
 
 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!