Last Update : December 24, 2021
ভারতচন্দ্রের রচনাবলী
বাংলা সাহিত্যে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর অতিপরিচিত কবি, অন্নদামঙ্গল কাব্যের একক রচয়িতা। তাঁর যেসব ভণিতা আমরা পাই তা হল—‘কবি রায়গুণাকর’, ‘দ্বিজ ভারত’, ‘ভারত ব্রাহ্মণ’ ইত্যাদি। তাঁর নামে প্রচলিত রচনাবলীর পরিচয় উল্লিখিত হল।
সত্যপীরের কথা
কবির প্রথম রচনা দুটি হল সত্যপীরের পাঁচালি। একটি ত্রিপদী ছন্দে রচিত [এটির রচনাকাল জানা যায় না], অন্যটি চৌপদী ছন্দে রচিত [১৭৩৭–৩৮ খ্রি.এর মধ্যে]। প্রথমটির কোন পুথি পাওয়া যায় না, দ্বিতীয়টির একটিমাত্র পুথি পাওয়া যায়। এগুলি রচনার সময় কবি দেবানন্দপুরে বাস করতেন।
পরিকল্পিত দেবতা সত্যপীরের দয়া–দাক্ষিণ্যের পরিচয় গল্প আকারে বিধৃত হয়েছে।দু–তিনটি গল্পকে কেন্দ্র করে এই পাঁচালি গড়ে উঠেছে। বিষয়বস্তু ইত্যাদিতে কবির মৌলিকতা কিছুই নেই। কবির অল্প বয়সের রচনা।
কাব্যের শেষাংশে কবির বংশ পরিচয় বিধৃত হয়েছে।রচনাটির গুরুত্ব এখানেই।
বিবিধ অলংকার গ্রন্থের ছায়ায় নায়ক–নায়িকার লক্ষণ ও বিবিধ অবস্থার বর্ণনা সংক্রান্ত রচনা হল রসমঞ্জরী। এর কোনো পুথি পাওয়া যায় না। রচনাকাল আনুমানিক ১৭৪০ খ্রি.। আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ভানুদত্ত মিশ্রের ‘রসমঞ্জরী’।রসমঞ্জরীর মুল বিষয়—
ক। নায়িকা প্রকরণ খ। নায়িকা সহায় গ। নায়ক প্রকরণ ঘ। নায়ক সহায় ঙ। শৃঙ্গার নিরূপন চ। ভাব প্রকরণ ছ। বয়োবিভাগ জ। জাতিকথন।
অন্নদামঙ্গল (অন্নপূর্ণামঙ্গল)
কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে তাঁর বনশের কীর্তি–কথা অবলম্বনে ভারতচন্দ্র এই মঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন। কাব্যের রচনাকাল জ্ঞাপক শ্লোক—
বেদ লয়ে ঋষি রসে ব্রহ্ম নিরুপিলা।
সেই শকে এই গীত ভারত রচিলা।।
—অর্থাৎ ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দ।
কাব্যটি ৩ খণ্ডে বিভক্ত— ১.অন্নপূর্ণামঙ্গল ২. বিদ্যাসুন্দর (কালিকামঙ্গল) ৩. মানসিংহ
সমগ্র অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রাচীন নির্ভরযোগ্য পুথি পাওয়া যায় না। পুরোনো যা পাওয়া গেছে তা সবই বিদ্যাসুন্দরের। অন্নদামঙ্গল সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় ১৮১৬ সালে তিন খণ্ডে [গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য দ্বারা]। এরপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রকাশ করেন ১৮৪৭ ও ১৮৫৩ তে। অনেকে বিদ্যাসাগর–কৃত সংস্করণকে আদর্শ বলে মন্রে করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখা ‘কবিবর ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের জীবন বৃত্তান্ত’ নামের লেখায় ভারতচন্দ্রের ১২ গীতের উল্লেখ রয়েছে। এগুলির পুথি কিংবা রচনাকাল অজ্ঞাত।
পত্রম্
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে লেখা একটি পত্র ভারতচন্দ্র বিরচিত বলে পাওয়া যায়। পত্রটি সংস্কৃতে রচিত এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে এটি রক্ষিত রয়েছে। পত্রটি সাল–তারিখ ছাড়াই রচিত।
নাগাষ্টকম্
রচনাকাল আনুমানিক ১৭৪৫–৫০ খ্রি। কাব্যটির কোনো পুথি পাওয়া যায় না। কাব্যটি সংস্কৃতে রচিত। বঙ্গানুবাদে যা পাওয়া যায় তা কবি–কৃত নয় বলেই মনে হয়।
অসমাপ্ত ও সংস্কৃত ভাষায় রচিত। মার্কন্ডেয় পুরাণের [৮২–৮৩ অধ্যায়]অনুসরণে এই নাটকটি রচিত। কোনো পুথি পাওয়া যায় না। রচনাকাল আনুমানিক ১৭৫০–এর পর। নাটকের বিষয় দেবী চন্ডীর মহিষাসুর দমন।
গঙ্গাষ্টকম্
সংস্কৃত ভাষায় রচিত গঙ্গাস্তোত্র। রচনাটির কোনো পুথি পাওয়া যায় না, এটির রচনাকালও জানা যায় না।