Last Update : April 26, 2024
সদুক্তিকর্ণামৃত
বাংলাদেশে সংকলিত একটি জনপ্রিয় চয়নিকা হল ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’। এই চয়নিকার সংকলক হলেন রাজা লক্ষ্মণসেনের ‘প্রেমৈক পাত্র সখা’ বটুদাসের সুযোগ্য পুত্র ‘মহামাণ্ডলিক’ শ্রীধর দাস। এই চয়নিকাতে দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকের বাঙালি জীবন ও সমকালীন সমাজের যে প্রতিফলন প্রতিফলিত হয়েছে, সেদিক থেকে উক্ত গ্রন্থের গুরুত্ব যথেষ্ট। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এই চয়নিকার প্রভাব অপরিসীম।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ সংকলিত হয়। এতে মোট পাঁচটি প্রবাহ এবং এক একটি প্রবাহে কয়েকটি বীচি এবং প্রত্যেক বীচি-তে পাঁচটি করে কবিতা সংগৃহীত হয়েছে। কবিতার সংখ্যা ২৩৭০টি এবং মোট কবির সংখ্যা ৪৮৫ জন। এতে অজ্ঞাত পরিচয় ৮০ জন কবি (সম্ভবত বাঙালি) ছাড়া কালিদাস, ভাস, ভামহ, ভর্তৃহরি, উমাপতিধর, জয়দেব প্রভৃতি বাঙালি কবিদের শ্লোক স্থান পেয়েছে।
‘সদুক্তিকর্ণামৃত’ মতো সংকলন গ্রন্থের গুরুত্ব যথেষ্ট। যেমন,
(এক) চয়নিকার সংগৃহীত শ্লোকাবলী থেকে বাংলার চিরকালীন রূপ, বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, ধর্ম-দর্শন এবং বাংলার বৈষ্ণব ও শাক্ত সাহিত্যের স্বরূপ সম্পর্কে বহু তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
(দুই) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এই সংকলন গ্রন্থের প্রত্যক্ষ প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে বৈষ্ণব পদাবলীতে এবং মঙ্গলকাব্যে দৈনন্দিন জীবনবিষয়ক কবিতাগুলোর প্রতিফলন পড়েছে।
(তিন) বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির পূর্বে বাঙালি যে বিভিন্ন শ্লোক রচনার মধ্য দিয়ে তার লিরিকধর্মী মনের পরিচয় প্রকাশ করছিল, তার প্রমাণ মেলে এই সংকলন গ্রন্থে।
(চার) গ্রন্থটি বাঙালি কবিদের রচিত এবং বাঙালির দ্বারা সংকলিত পদসংকলন গ্রন্থ।
(পাঁচ) ক্ষিতিমোহন সেন এই গ্রন্থসম্পর্কে বলেছেন, ‘নানা কবির রচনা হইতে মাধুকরী বৃত্তিতে সংগ্রহ করিবার কাজটা হয়তো বাংলাদেশে আরম্ভ হইয়াছিল’।
‘সদুক্তিকর্ণামৃত’র নমুনা :
চলৎকাষ্ঠং গলৎকুড্যমুত্তানতৃণসঞ্চয়ম্।
গণ্ডু পদার্থি মুণ্ডুকাকীর্ণং জীর্ণং গৃহং মম।।
অর্থাৎ, এখানে কুটিরে ঘেরা বাংলার গ্রামের চিরদারিদ্র্যের ছবি। বর্ষায় কাঠের খুঁটি প্রায় ভেঙে পড়ে, মাটির দেওয়াল ধ্বসে যায়, জীর্ণ গৃহ মুণ্ডুকাকীর্ণ হয়ে পড়ে।