Menu

চর্যাপদ-এর টীকাকার মুনিদত্ত [টীকা]

Last Update : January 12, 2024

চর্যাপদ-এর টীকাকার মুনিদত্ত

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে নেপালে প্রাপ্ত চর্যাগীতিসহ মোট চারখানি পুথি “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে প্রকাশ করেন। চর্যাগীতিকারের সঙ্গে তার সংস্কৃত টীকাও ছিল। কিন্তু পুথিটির কয়েকটি পৃষ্ঠা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় টীকাকারের নাম পাওয়া যায়নি। পরে ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী ঐ একই সংকলনের তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কার করেছিলেন। তাতেই টীকাকার হিসেবে মুনিদত্তের নাম পাওয়া যায়। অনুমান করা যায় যে, চর্যাগীতির দুর্বোধ্যতা নিরাকরণের জন্যই মুনিদত্ত এই পদগুলিকে একত্র করেছিলেন এবং বিশেষভাবে অধিকারী জনের জন্যই সংস্কৃত ভাষায় পদগুলির সহজবোধ্য টীকা রচনা করেছিলেন।

মুনিদত্ত সম্ভবত ১৪শ শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন। বজ্রযান ও সহজযানে তাঁর যে বিশেষ অধিকার ছিল, তা এই সংস্কৃত টীকা থেকেই বোঝা যায়। তিনি চর্যার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বৌদ্ধতান্ত্রিক পারিভাষিক শব্দগুলির যথাসম্ভব সরলার্থ করেছেন এবং বজ্রযান ও সহজযানের অন্যান্য প্রামাণিক গ্রন্থ থেকেও অনেক উদ্ধৃতির উল্লেখ করেছেন। এমনকি ‘পরদর্শন’ অর্থাৎ সহজিয়া মত ভিন্ন অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের দার্শনিক মত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। আমরা যদি মুনিদত্তের টীকা না পেয়ে শুধু ‘চর্যাচয়’ এবং তিব্বতী অনুবাদ পেতাম, তাহলে চর্যাগীতির দার্শনিক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করা কঠিন হত। কারণ তিব্বতী অনুবাদ প্রধানত আক্ষরিক, তা দিয়ে বজ্রযান ও সহজযানের সূক্ষ্ম তত্ত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করা দুরূহ হত। মুনিদত্তের কতটুকু ‘সহজধর্মে’ অধিকার ছিল, সে বিষয়েও কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এবং সংস্কৃত টীকাটির যাথার্থ্য সম্বন্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু মুনিদত্তের টীকায় উদ্ঘাটিত তত্ত্ব সংস্কৃত ও অপভ্রংশে রচিত মন্ত্রযান বিষয়ক নানা গ্রন্থে বর্ণিত দার্শনিক তত্ত্বের বিরোধী নয়, এবং মুনিদত্ত স্বমত প্রমাণ করতে গিয়ে বহু সংস্কৃত, অপভ্রংশ ও দেশীয় ভাষায় রচিত গ্রন্থাদি থেকে উল্লেখ করেছেন। অতএব তাঁর টীকাকে অযথার্থ বলে ত্যাগ করা উচিত হবে না।

আরো পড়ুন--  অগ্নিবীণা 1922, কাজী নজরুল ইসলাম 

একটু অন্য লেখা – চর্যাপদের কবি ২৪ নাকি ২৩?


আধুনিক পণ্ডিতদের অনুমান, মূল পুথির নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’ এবং মুনিদত্তকৃত সংস্কৃত টীকার নাম ‘নির্মলগিরা টীকা’। মুনিদত্তকৃত সূচনা-শ্লোকের “নির্মলগিরাং টীকাং বিধান্যো স্ফুটম্” উক্তির দ্বারা একথা প্রমাণিত হয়।

মুনিদত্ত সংকলিত ও টীকাকৃত মূল পুথিতে পঞ্চাশটি (মতান্তরে একান্নটি) চর্যা ছিল। তার মধ্যে ১১ সংখ্যক চর্যার বৃত্তি মুনিদত্ত কর্তৃক রচিত হয়নি। নেপালী লিপিকার নকলের সময় ঐ পদটির ব্যাখ্যা নেই দেখে নকল করা পুথিতেও ঐ পদটি বাদ দিয়েছিলেন। তিব্বতী অনুবাদকও ব্যাখ্যা নেই দেখে ঐ পদের তিব্বতী অনুবাদ করেন নি। এর থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে তিব্বতী অনুবাদক মুনিদত্তের টীকার উপর যথেষ্ট নির্ভর করেছিলেন এবং তিব্বতী অনুবাদ অপেক্ষা টীকার মূল্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন--  রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় সাহিত্যচর্চা

বস্তুত চর্যাগীতি আস্বাদনের প্রধান সহায় হল মুনিদত্তের সংস্কৃতভাষ্য ‘নির্মলগিরা টীকা’। টীকাই চর্যা-বোধিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!