Menu

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ

Last Updated on December 24, 2021 by বাংলা গাইড


 
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ।। রাষ্ট্রশাসন পরিচালনের জন্য ইংরেজ সিভিলিয়ানদের এ দেশের ভাষা শিক্ষা করা একান্তভাবেই প্রয়োজন। কোম্পানি এই উদ্দেশ্যে কলকাতায় একটি কলেজ স্থাপন করলো ১৮০০ সালে। কোম্পানির উদ্দেশ্যের মধ্য রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থা ব্যতীত অন্য কিছুই ছিল না। কিন্তু ইতিহাসের রথচক্র কোনো শাসকের প্রয়োজনকেই খাতির করে না। তাই এর কার্যধারা কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনের সীমায় বদ্ধ রইল না। বাংলা গদ্যসাহিত্যের সৃষ্টিতে ই প্রতিষ্ঠান এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করল। এই কলেজটি হল ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি এই কলেজে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের ভার পেলেন। ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত এই কলেজটি তার উদ্দেশ্য পালন করে গিয়েছে। কিন্তু ১৮১৫ সালের পরে তার ইতিহাস গুরুত্ব হারিয়েছে। ১৮০১ – ১৮১৫ এই কয় বর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ বাংলা গদ্যসাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করে এদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে। অবশ্য ১৮১৫ সালের পর রামমোহনের আবির্ভাবে এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাইরেও নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গদ্য-সাহিত্যের দায়িত্ব গ্রহণ করায় ভরকেন্দ্র ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ থেকে সরে গেল। অথচ বাংলায় গদ্যসাহিত্য রচনা করা এই কলেজের লক্ষ্য ছিল নাছিল উপলক্ষ মাত্র। এই উপলক্ষই কিন্তু কলেজটিকে ইতিহাসের বুকে মর্যাদা দিয়েছে।

অবশ্য এর জন্য প্রথমেই কেরির ভূমিকার কথা স্মরণ করতে হয়। কেরি আগেই বাংলা গদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন বাইবেলের অনুবাদ প্রসঙ্গে। বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে গদ্য-গ্রন্থের অভাব প্রথমেই তিনি লক্ষ করলেন। তিনি যে-সব পণ্ডিত ও মুনসিকে শিক্ষকরূপে নিযুক্ত করেছিলেনতাঁদের সাহায্যে নিজে যেমন গদ্যগ্রন্থ সঙ্কলনের কাজে হাত দিলেন তেমনি তাঁদের স্বাধীনভাবে গ্রন্থ রচনায় উৎসাহিত করতে লাগলেন।

আরো পড়ুন--  সম্বাদ প্রভাকর ১৮৩১
 
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকদের মধ্যে প্রধান তিনজন স্বয়ং কেরিপ্রধান পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার এবং কেরি প্রাক্তন মুনশি রামরাম বসু। তাঁদের এবং অন্যান্য পণ্ডিতদের রচিত গ্রন্থগুলির একটি পূর্ণ তালিকা (১৮১৫ পর্যন্ত) দেওয়া হল
 
১. রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র [রামরাম বসু ১৮০১]
২. থোপকথন [উইলিয়াম কেরি ১৮০১]
৩. হিতোপদেশ [গোলকনাথ শর্মা ১৮০২]
. বত্রিশ সিংহাসন [মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ১৮০২]
৫. লিপিমালা [রামরাম বসু ১৮০২]
৬. ওরিয়েন্টাল ফেবুলিস্ট [তারিণীচরণ মিত্র ১৮০৩]
৭. মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্র [রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় ১৮০৫]
৮. তোতা ইতিহাস [চণ্ডীচরণ মুনশী ১৮০৫]
৯. হিতোপদেশ [রামকিশোর তর্কচূড়ামণি ১৮০৮]
১০. হিতোপদেশ [মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ১৮০৮]
১১. রাজাবলি  [মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ১৮০৮]
১২. ইংরাজী-বাংলা শব্দকোষ [মোহনপ্রসাদ ঠাকুর]
১৩. ইতিহাসমালা [উইলিয়ম কেরি ১৮১২]
১৪. প্রবোধচন্দ্রিকা [মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ১৮১৩ (পরে প্রকাশিত)]
১৫পুরুষ পরীক্ষা [হরপ্রসাদ রায় ১৮১৫]
 
আরও দু-তিনখানি গ্রন্থ ফোর্ট উইলিয়ামের লেখকগোষ্ঠির দ্বারা রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থগুলি প্রধানত ইংরেজিফারসি বা সংস্কৃত গ্রন্থের অনুবাদ এবং আখ্যানধর্মী। কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনীও প্রকৃত প্রস্তাবে গালগল্পের সংকলন। এই সব গ্রন্থের ভাষায় অকারণ সংস্কৃতাধিক্য এবং ফারসি শব্দের প্রয়োগ যেমন দৃষ্ট হয়তেমনি দুরান্বয়বিভক্তিযুক্ত পদ গঠনের ক্রটি লক্ষ করা যায়। ভাষা অনেকাংশে দুর্বোধ্যপ্রাণহীন ও কৃত্রিম। কিন্তু এর পূর্বে বাংলা গদ্যে যে সব পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে (মিশনারী প্রচেষ্টার কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়– দেখুন) তার তুলনায় এঁদের ভাষা অনেক ভাল এবং প্রকৃত বাংলা ভাষার অনেক নিকটবর্তী। এদিক দিয়ে বিচার করলে এই লেখকদের সাধারণভাবে সাহিত্যিক বাংলা গদ্যের স্থাপয়িতার সম্মান দিতে হয়। কলেজের প্রধান তিনন গ্রন্থকারকে ধরলে এ কথা নিঃসংশয়ে মেনে নিতে হয় যেফোর্ট উইলিয়ম কলেজই বাংলা সাহিত্যে গদ্যের প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করল। পূর্বোক্ত পণ্ডিতদের মধ্যে হরপ্রসাদ রায়তারিণীচরণ মিত্র প্রভৃতির গ্রন্থ কলেজের বাইরেও বেশ কিছু জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সম্ভবত এঁদের গল্পের নবীনতাই তার কারণ। সব দিক বিবেচনায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মর্যাদা বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসে অবশ্যই স্বীকার্য।
———————————————————–

 

 

 

আরো পড়ুন--  সোমপ্রকাশ পত্রিকা ১৮৫৮

 

———————————————————–
সাহায্য- ক্ষেত্রগুপ্ত
———————————————————–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!