Last Updated on December 25, 2021 by বাংলা গাইড
সমাচার দর্পণ ১৮১৮
প্রকাশকাল/আবির্ভাব
১৮১৮ সালের ২৩শে মে। ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশ ও বিবর্তনের একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৭৯৯ সালের মে মাসে লর্ড ওয়েলেসলি সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রকাশ করেন। ১৯ বছর পর ১৮১৮ সালে লর্ড হেস্টিংস এই আইনটি তুলে দেন। এই সময়ই ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশিত হয়।
পরিচিতি
গোপাল হালদার মহাশয় ‘সমাচার দর্পণ’কে ১৮১৮-‘৪১-এর মধ্যে প্রধান বাংলা সংবাদপত্র রূপে চিহ্নিত করেছেন। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মার্শম্যান। মার্শম্যান মিশনের কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, শেষের দিকে এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। তবে অনেকের মতে রামমোহনের সঙ্গে ‘সমাচার দর্পণে’র অর্থাৎ মিশনারী সম্প্রদায়ের বিরোধ ক্রমেই তুঙ্গে ওঠায় এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি শ্রীরামপুর প্রেসে ছাপা হয়ে প্রকাশিত হয়।
পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য
এই পত্রিকা প্রকাশের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ও সমাজের নিন্দাপ্রচার এবং হিন্দুধর্মকে নস্যাৎ করে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠা।
লেখকগোষ্ঠী
রামমোহন রায়, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখ।
অবদান/গুরুত্ব
‘সমাচার দর্পণে’র দ্বারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সমাজ বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। দেশীয় সমাজে কোথায় কি ঘটছে, কোথায় সমাজের উৎকর্ষ, অপকর্ষ দেখা দিচ্ছে, শিক্ষাসংস্কার, গ্রন্থপরিচয় প্রভৃতি সম্বন্ধে ‘সমাচার দর্পণ’ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সাংবাদিকতার আদর্শ মেনে চলেছে। পরবর্তীকালে রামমোহন, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রভৃতি দক্ষ সম্পাদকেরা বাংলা সাময়িক পত্র ও সাংবাদিক বৃত্তিকে উচ্চ আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করলেও ‘সমাচার দর্পণে’র সাংবাদিক স্বরূপকে কখনও ছোট করা যায় না। নারীশিক্ষা, সতীদাহ নিবারণ চেষ্টা প্রভৃতি নানা রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিচয় এই পত্রিকায় পাওয়া যায়।
সমাচার দর্পণের ভাষার দৃষ্টান্ত
“এইক্ষণে সাহেব লোকের মত হইব এবং ধারা ব্যবহার, পুরুষার্থ, ধার্মিকতা, সৌজন্য, বিচারবাক্য সেই প্রকার প্রকাশ করিব।”—এই ভাষার সহজবোধ্যতা ও প্রবহমানতা পরবর্তীকালের ‘জ্ঞানান্বেষণ’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘বঙ্গদূত’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সম্বাদ প্রভাকর’, ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সঙ্গে ‘সমাচার দর্পণে’-র স্থানও স্বীকৃতির যোগ্য।
সাহায্য : দেবেশকুমার আচার্য