Menu

বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতি সমস্যা, Discuss with best unique 3 points

Last Update : April 26, 2024

বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতি সমস্যা

ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যের বিদ্যাপতি সমস্যা কিছুটা জটিল আকার ধারণ করেছে। বিদ্যাপতির প্রতিভা লোকমহিমায় মণ্ডিত হয়েছিল। ফলে অনেক বৈষ্ণব কবি তাঁর ভণিতায় নিজেদের পর চালিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে পালাগানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য কীর্তনীয়াদের দ্বারা অন্য কবির পদে বিদ্যাপতির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বিদ্যাপতি মৈথিলী ভাষায় রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলী রচনা করেন। সমগ্র পূর্বভারতে বিদ্যাপতির এই পদাবলী বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এক এক রাজ্যের ভাষার সঙ্গে বিদ্যাপতির পদের মৈথিলী শব্দ মিশে গিয়ে কৃত্রিম ব্রজবুলি ভাষার সৃষ্টি হয়। ব্রজবুলি সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করছি। বাংলাদেশে বহু কবি বিদ্যাপতির অনুকরণ করেন। কেউ কেউ কাব্যজগতে অমরত্বলাভের জন্য নিজের পদে বিদ্যাপতির ভণিতা যোগ করে জনসমাজে প্রচারে ব্রতী হন। শুধু বাংলাদেশে নয়, মিথিলায়ও অনেক কবি নিজেদের পদকে বিদ্যাপতির নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে গ্রীয়ার্সন সাহেব লিখেছেন–

“Numbers of imitators sprang up, many of whom wrote in Vidyapati’s name so that it is now difficult to seperate the genuine from the imitations, especially as the former have been altered in the course of ages to suit the Bengali idiom and metre. “

বাস্তবিকই বাংলাদেশের পদসংকলনে বিদ্যাপতির ভণিতাযুক্ত এমন সব পদ আছে, যেগুলিকে বিদ্যাপতির রচনা বলে গ্রহণ করা যায় না। বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় রচিত বিদ্যাপতির একাধিক পদ পাওয়া যায়। আসল বিদ্যাপতি ও নকল বিদ্যাপতি একাকার হয়ে গেছেন।

আরো পড়ুন--  কবি জ্ঞানদাস, 16শ শতকের কবি

বিদ্যাপতির ভণিতায় বিভিন্ন কবি

বাংলায় পদসংকলনে কবিরঞ্জন, কবিশেখর, শেখর, চম্পতি, বল্লভ, ভূপতিসিংহ, দশঅবধান ভণিতাযুক্ত পদগুলিকে বিদ্যাপতির বলে ধরা হয়। মিথিলায় প্রাপ্ত উপকরণ অবলম্বনে সমালোচকগণ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বিদ্যাপতি স্বনাম ছাড়া কবিকন্ঠহার, সরস কবিকণ্ঠহার নবজয়দেব ও অভিনব জয়দেব প্রভৃতি অভিধাগুলি ব্যবহার করতেন। সুতরাং কবিরঞ্জন ও চম্পতি প্রভৃতি ভণিতাযুক্ত পদগুলি বিদ্যাপতি রচিত কিনা বিচার সাপেক্ষ।

সমালোচকরা স্থির করেছেন, ঐসব নামধেয় কোনো কোনো কবি বিদ্যাপতির পরে আবির্ভূত হন। উড়িষ্যার রাজা প্রতাপরুদ্রের মন্ত্রী কবি চম্পতি বিদ্যাপতির অনুকরণে পদ লিখতেন। এর অনেক পদ বিদ্যাপতির নামে চলে গেছে। চম্পতি বিদ্যাপতির উপাধি এরূপ ভ্রান্ত ধারণা গড়ে উঠেছে। নব কবিশেখর, রায় শেখর ও শেখর-এগুলি বিদ্যাপতির অভিবা নয়। বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ পদকর্তা রায়শেখর এই তিন ভণিতায় বিদ্যাপতির আদর্শে পদরচনা করতেন। শেখরের ভণিতাযুক্ত ব্রজবুলি পদগুলি বিদ্যাপতির পদ বলে চলে আসছে। সমস্যা হচ্ছে কবিরঞ্জনের ভণিতা নিয়ে। বিদ্যাপতির নাম বা উপাধিধারী কোনো কবি এই বাংলা পদগুলি রচনা করেন।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতি সমস্যা
ছবি : উইকিপিডিয়া

হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সাহিত্যরত্ন জানিয়েছেন যে শ্রীখণ্ডের রামগোপাল দাসের ‘শ্রীখণ্ডির শাখা নির্ণয়‘ গ্রন্থে শ্রীরঘুনন্দনের শিষ্য কবিরঞ্জন নামে এক বৈদ্য পদকর্তার উল্লেখ রয়েছে। তিনি বিদ্যাপতির ভণিতায় পদ রচনা করতেন।—

ছোট বিদ্যাপতি বলি যাহার খেয়াতি। 

যাহার কবিতা গানে ঘুচয়ে দুর্গতি।।

ছোট বিদ্যাপতি

‘ছোট বিদ্যাপতি’ কবিরঞ্জন ভণিতায়, কখনো বিদ্যাপতির ভণিতায় পদ রচনা করতেন। চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির মিলন সংক্রান্ত যে কাহিনী বাংলাদেশে প্রচলিত তা রঘুনন্দনের শিষ্য কবিরঞ্জন ও নরোত্তম ঠাকুরের ভক্ত দীনচণ্ডীদাসের মিলন ও সহজিয়াতত্ত্ব বিষয়ক আলোচনার ব্যাপার। এই ছোট বিদ্যাপতি বাংলা ভাষায় পদ রচনা করেন। দুএকটি দৃষ্টান্ত এই—

আরো পড়ুন--  কবি গোবিন্দদাস, 16শ শতকের কবি

*মরিব মরিব সখি নিশ্চয় মরিব।

*রাই জাগ, রাই জাগ শুকসারী বলে।

*শুনলো রাজার ঝি তোরে কহিতে আসিয়াছি।

নকল কবিরঞ্জন বিদ্যাপতিকে গ্রীয়ার্সনের ভাষায় আমরা ‘Pseudo Vidyapati’ বা ‘ছদ্মবেশী বিদ্যাপতি’ বলতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যাপতির ভণিতা সব পদই নকল বিদ্যাপতির রচনা নয়। ভাব, ভাষা, বিষয়বস্তু ও কাব্যশিল্পের বিচারে বিদ্যাপতির পদাবলী স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত।

Table of Contents

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!