Menu

কবি বিদ্যাপতির রচনাবলী, Discuss with Best Unique 11 Points

Last Update : April 26, 2024

বিদ্যাপতির রচনাবলী শীর্ষক লেখায় বিদ্যাপতির নামে প্রচলিত কিংবা তাঁর রচিত বিভিন্ন রচনার মোটামুটি সংক্ষিপ্ত একটা ধারণা দেওয়া। বিদ্যাপতির রচনাবলী অর্থাৎ তাঁর রচিত সমস্ত রচনা/গ্রন্থের পরিচয়।

কবি বিদ্যাপতির রচনাবলী

সূচনা


বিদ্যাপতি মিথিলার ছয়জন রাজা ও একজন রাণীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। শিবসিংহের মৃত্যু বা নিরুদ্দেশের পর ভাগ্য বিপর্যয়ের ফলে কবি কিছুকাল পুরাদিত্য নামে অন্য এক রজার আশ্রয় গ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি এইসব গ্রন্থ রচনা করেন।

বিদ্যাপতির রচনাবলী সমূহ :

  • ১. কীর্তিসিংহের সময়ে কীর্তিলতা,
  • ২. দেবসিংহের সময়ে ভূপরিক্রমা,
  • ৩. শিবসিংহের সময়ে কীর্তিপতাকা ও পুরুষপরীক্ষা,
  • ৪. পদ্মসিংহ ও বিশ্বাসদেবীর সময়ে শৈবসর্বস্বসার ও গঙ্গাবাক্যাবলী
  • ৫. নরসিংহ ও ধীরমতীর সময়ে বিভাগসার ও দানবাক্যাবলী,
  • ৬. পুরাদিত্যের আশ্রয়ে লিখনাবলী,
  • ৭ ভৈরবসিংহের সময়ে দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী।
  • এছাড়া মৈথিলী পদে কীর্তিসিংহের খুল্লতাত দেবীসিংহ এবং অন্যান নৃপতিদের পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্র, জ্ঞাতিভ্রাতা ও মন্ত্রীদেরও উল্লেখ রয়েছে।
বিদ্যাপতির রচনাবলী
ছবি : ইন্টারনেট

বিদ্যাপতির মনোধর্ম


বিদ্যাপতি রাজসভার কবি। নাগরিক জীবনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। রসজ্ঞ রাজন্যবর্গ ও রাজকর্মচারীদের রসতৃষ্ণা মিটাবার জন্য তিনি মণ্ডনকলা ও বাক্‌নির্মিতির অসামান্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। বিদ্যাপতি ছিলেন স্মার্ত পণ্ডিত ও কবি। একদিকে রসসৃষ্টির দ্বারা রাজমনোরঞ্জন, অন্যদিকে স্মৃতিসংহিতার আদর্শে মিথিলার শিথিল ব্রাহ্মণ সমাজকে পুনরুজ্জীবন ও সমাজ সংরক্ষণে প্রয়াসী হন বিদ্যাপতি। পাণ্ডিত্য, রসচর্চা ও স্মৃতিসংহিতার অনুশীলনের দ্বারা বিদ্যাপতি জীবিত কালেই অভিনব জয়দেবমৈথিল কোকিল নামে রাজন্যবর্গ ও মিথিলাবাসীদের দ্বারা বিশেষ শ্রদ্ধা সম্মান লাভ করেন।

সমাজসংস্কারক বিদ্যাপতি


বিদ্যাপতির জীবনে রাজবংশ, রাজসভা ও রাষ্ট্রিক সংকট উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। মিথিলার কামেশ্বর রাজবংশের উত্থান পতনের সঙ্গে কবির অদৃষ্ট ও কবিকর্ম বিজড়িত ছিল। দিল্লীর তুঘলক বংশের সন্তান গিয়াসুদ্দিন, গৌড়ের সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ও অসলান নামক এক মুসলমান সামন্তের দ্বারা তিন তিনবার ত্রিহুত আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত হয়। এর ফলে মিথিলায় হিন্দুসমাজ ও সংস্কৃতির চূড়ান্ত অধঃপতন ঘটে। বিদ্যাপতির রচনার নাগরিক রুচি ও আদিরসের বাহুল্য দরবারী আদর্শে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিদ্যাপতি মধ্য যুগের একজন ইতিহাস সচেতন কবি। মিথিলার মুসলমান অত্যাচারে হিন্দুসমাজ কিভাবে বিনষ্টির পথে অগ্রসর হচ্ছিল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিচয় মিলে ‘কীর্তিলতা’য়।

মুসলমান আক্রমণের ফলে মিথিলায় ব্রাহ্মণ ভেঙে পড়েছিল। বিদ্যাপতি সেই ভঙ্গুর সমাজকে পুনর্গঠনের জন্য শাক্ত ও শৈবাদর্শ প্রচার করে গণমানসে শক্তি সঞ্চারে ব্রতী হন। তার প্রমাণ মিলে শৈবসর্বস্বসার, গঙ্গাবাক্যবলীও দুর্গাভক্তি তরঙ্গিনী গ্রন্থে। রাষ্ট্রিক দুর্যোগে অর্থনৈতিক দুর্দশায় বিদ্যাচর্চার বিলুপ্তি ও অসবর্ণ বিবাহে বিধ্বস্ত ত্রিহুতের সমাজজীবনকে বিদ্যাপতি নতুন করে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। এসব কারণে বিদ্যাপতির কবিমানসে ইতিহাসচেতনা, সমাজচেতনা ও দরবারী আদর্শ বিশেষভাবে কার্যকরী ছিল।

আরো পড়ুন--  ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮১২-১৮৫৯

বিদ্যাপতির রচনাবলী সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :

বিদ্যাপতির রাধাকৃষ্ণ পদ


বিদ্যাপতি মূলত নাগরবৃত্তিচারী রাজসভার কবি। জীবনের বহিরঙ্গেই প্রধানত তাঁর পদচারণা। তাঁর পদাবলী সাহিত্যে উজ্জ্বল ভাষাভঙ্গিমা, আলংকারিক সৌন্দর্য ও বাগবৈদগ্ধ্য বিদগ্ধ মার্জিত রাজন্যবর্গ ও রাজকর্মচারীদের মনঃপ্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করে রচিত। বাংলাদেশে বিদ্যাপতি রাধাকৃষ্ণ প্রণয় পদাবলী রচয়িতা হিসেবে বিখ্যাত। কিন্তু বিদ্যাপতি বিচিত্রমুখী প্রতিভার অধিকারী। স্মৃতি, মীমাংসা, ব্যবহার শাস্ত্র, পূজাপদ্ধতি, রতানুষ্ঠান ও তীর্থ মাহাত্ম্য প্রভৃতি নানা বিষয়ে তাঁর সদাজাগ্রত কৌতূহল ছিল। বিদ্যাপতি কবি, দার্শনিক, ঐতিহাসিক, বহুভাষাবিদ ও বহুশাস্ত্রবিদ। তা সত্ত্বেও তাঁর প্রতিভার সমধিক স্মৃতি ও ব্যাপ্তি ঘটেছে রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলীর মধ্যে।

ভূ-পরিক্রমা


বিদ্যাপতির প্রথম গ্রন্থ ‘উপরিক্রমা’ ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে দেবসিংহের নির্দেশে রচিত হয়। এ সময়ে বিদ্যাপতি দেবসিংহের সময়ে নৈমিষারণ্যে বসবাস করেন। এই গ্রন্থটি ভৌগোলিক তথ্য সমৃদ্ধ। মিথিলা থেকে নৈমিষারণ্য পর্যন্ত সমস্ত তীর্থের বর্ণনা এতে রয়েছে। মিথিলা তখন মুসলমান শাসক অসলান কর্তৃক বিজিত। বোধহয় বিদ্যাপতি হিন্দুর ধর্ম ও সংস্কৃতিকে পুনর্জাগরণের জন্য তীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণনার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেন।

কীর্তিলতা


বিদ্যাপতির দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কীর্তিলতা’য় কীর্তিসিংহের বীরত্ব কাহিনী বর্ণিত। মৃত ‘গএনেসে’র দুই পুত্র বীরসিংহ ও কীর্তিসিংহ জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহের সাহায্যে অসলানকে যুদ্ধে নিহত করে ত্রিহুত পুনরাধিকার করেন। তুর্কী মুসলমান অসলানের পরধর্মবিদ্বেষ ও পরজাতি পীড়ন বিদ্যাপতি তীব্র ঘৃণা ও ব্যঙ্গের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে জৌনপুরের নাগরিক ঐশ্বর্য ও বিলাস বাসনের বর্ণনাও রয়েছে। মধ্যযুগে একটি সমাজসচেতন ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে কীর্তিলতার মূল্য যথেষ্ট।

কীর্তিপতাকা


শিবসিংহের কীর্তি ও প্রণয়কে কেন্দ্র করে বিদ্যাপতি অবহট্ট ভাষায় ‘কীর্তিপতাকা’ নামে আর একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই পুঁথির কিছুটা অংশ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় নেপাল রাজদরবার থেকে লিখে নিয়ে আসেন। এই গ্রন্থে শিবসিংহের শৃঙ্গার রসবহুল লীলা ও মুসলমান নৃপতির (বোধ হয় গৌড়ের সুলতান) পরাভবের কাহিনী বিবৃত হয়েছে।

পুরুষপরীক্ষা, লিখনাবলী


উপরের দুটি গ্রন্থ ছাড়া বিদ্যাপতির বাকি সব গ্রন্থ সংস্কৃতে রচিত—সেগুলি স্মৃতি ও ব্যবহার বিষয়ক। কেবল ‘পুরুষপরীক্ষা’ ও ‘লিখনাবলী’ ধর্মবিষয়ক নয়। শিবসিংহের রাজত্বকালে ‘পুরুষপরীক্ষা’ রচিত হয়। এতে ঐতিহাসিক ও অনৈতিহাসিক অনেক গল্প আছে। হরপ্রসাদ রায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের ছাত্রদের জন্য এটির বঙ্গানুবাদ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত এর জনপ্রিয়তা ছিল। সংস্কৃতে পত্রলিখন পদ্ধতি শেখাবার উদ্দেশ্যে ১৪১৮ খ্রীষ্টাব্দে ‘লিখনাবলী’ রচিত হয়। কবি তখন শিবসিংহের আশ্রয়চ্যুত হয়ে দ্রোণবারের অধিপতি পুরাদিত্যের আশ্রয়ে ছিলেন। তাঁরই নির্দেশে অল্পবুদ্ধি শিক্ষার্থীদের ভাবসৌকর্য ও প্রকাশ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটি রচিত হয়।

আরো পড়ুন--  বিদ্যাপতির জীবন ইতিহাস, Best unique 5 points

বিভাগসার, দানবাক্যাবলী


১৪৪০-৬০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে বিদ্যাপতি দর্পনারায়ণ নরসিংহের নির্দেশে ‘বিভাগসার’ ও তাঁর দানশীলা পত্নী ধীরমতী দেবীর নির্দেশে ‘দানবাক্যাবলী’ রচনা করেন। প্রথম গ্রন্থে সম্পত্তি বন্টন উত্তরাধিকার তত্ত্ব সন্নিবেশিত হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থে জলাশয় খনন, ধর্মশালা নির্মাণ ও ভিক্ষুকদের অন্নপানদানে শাস্ত্রীয় পুণ্যলাভের কথা বর্ণিত হয়েছে। ‘বর্ষনির্ণয়’ গ্রন্থে বারো মাসের করণীয় পুণ্য কর্ম ও ‘গয়াপত্তনে’ গয়াধামের তীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

স্মৃতিগ্রন্থ সমূহ


পদ্মসিংহের পত্নী বিশ্বাসদেরী বিদুষী মহিলা ছিলেন এবং তিনি কিছুকাল মিথিলা শাসন করেন। রাণীর নির্দেশে বিদ্যাপতি শৈবসর্বস্বসার’, ‘প্রমাণভূত পুরাণসংগ্রহ’ ও ‘গঙ্গাবাক্যাবলী’ রচনা করেন। ‘গঙ্গাবাক্যাবলী’ রচনা করতে গিয়ে বিদ্যাপতি লিখেছেন যে রাণী বিশ্বাসদেবী এর রচয়িত্রী। বিদ্যাপতি কেবল প্রমাণ শ্লোক উদ্ধৃত করে গ্রন্থটিকে সম্পূর্ণতা দান করেছেন।

যাহোক, শৈবসর্বস্বসার শিব উপাসনা সম্বন্ধীয় শৈবস্মৃতি গ্রন্থ। মিথিলার রাজবংশ প্রধানত শিবোপাসক ছিলেন। বিদ্যাপতিও শৈবধর্মের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। মিথিলার রাজারা অনেক শিবমন্দির তৈরী করেন। বিদ্যাপতি নিজের গ্রাম বিসফিতে একটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, গঙ্গাবাক্যাবলীতে গঙ্গাসাগর থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার ঘাটে ঘাটে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন তীর্থের মাহাত্ম্য ও ক্রিয়াপদ্ধতির বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে।

বিদ্যাপতির সর্বশেষ স্মৃতিগ্রন্থ ‘দুর্গাভক্তি তরঙ্গিণী’ ভৈরবসিংহের নির্দেশে রচিত হয়। এ সময় মিথিলার রাজা ছিলেন ভৈরব সিংহের পিতা নরসিংহদেব, এই গ্রন্থ রচনা সমাপ্তির সময়ে নরসিংহদেবের জ্যেষ্ঠপুত্র বীরসিংহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গ্রন্থে নরসিংহদেবের তিন পুত্র ধীরসিংহ, ভৈরব সিংহ ও চন্দ্রসিংহের জয়গান করেছেন বিদ্যাপতি। সে যা হোক, উল্লিখিত গ্রন্থটি দুর্গাপুজা সংক্রান্ত স্মৃতিনিবন্ধের অন্যতম গ্রন্থ। মৈথিলী পণ্ডিত ডঃ জয়কান্ত মিশ্রের মতে বিদ্যাপতি গোজাতি রক্ষাসংক্রান্ত ‘গোরক্ষোপাখ্যান’ নামক একটি নাটক রচনা করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যাপতি সংস্কৃতে ও অবহট্ট ভাষায় পৌরাণিক ধর্মসম্বন্ধীয় স্মৃতিগ্রন্থ, ঐতিহাসিক আখ্যান, তীর্থ বিবরণী, রোমান্টিক গল্প ও পত্রলিখন পদ্ধতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করে। বিস্ময়কর এক বিচিত্রমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বারবার মুসলিম আক্রমণে নানাদিক থেকে বিপন্ন ও বিধ্বস্ত সমাজকে তিনি পৌরাণিক আদর্শের দৃঢ় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করে পুনর্গঠনে প্রয়াসী হন। তাই মিথিলার রাজন্যবর্গ বারবার বিদ্যাপতিকে স্মরণ করেছেন। মিথিলার ইতিহাসে মধ্যযুগে হিন্দুসংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ও হিন্দুসমাজের জাগরণে বিদ্যাপতির দান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে, মিথিলাবাসীদের ছিল সাম্প্রদায়িকতা বর্জিত সমন্বয়ী মনোভাব। মিথিলার রাজবংশ প্রধানত শৈব ছিল। কিন্তু তাঁরা সকল ধর্মের প্রতি উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন। কোনো কোনো রাজা বৈষ্ণব ছিলেন। সে যাহোক, পঞ্চোপাসক হিন্দুর বিভিন্ন ধর্মচর্যা মিথিলায় নির্বিরোধ পাশাপাশি চলছিল।

আরো পড়ুন--  কবি বিদ্যাপতির ধর্ম, Discuss with best 3 unique points

উপসংহার


কবি বিদ্যাপতি স্মৃতি, পুরাণ, তীর্থ ও গেজেটিয়ার প্রভৃতি সংস্কৃতিমূলক গ্রন্থ রচনা করে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যাপতির চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তাঁর পদাবলীর জন্য। কেবলমাত্র স্মৃতি শাস্ত্র রচয়িতা হলে বিদ্যাপতি মিথিলার সীমা ছাড়াতে পারতেন কিনা সন্দেহ। সংস্কৃত ও অবহট্ট গ্রন্থগুলির মধ্যে বিদ্যাপতির প্রতিভার বহুমুখিতার পরিচয় মিলে। কিন্তু সেগুলির মধ্যে কবিপ্রতিভার সৃজনশীল মৌলিকতার তেমন নিদর্শন নেই।

বিদ্যাপতি ‘কবিকুল চন্দ’ হয়েছেন রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলীর জন্য। বিদ্যাপতির পদাবলী আলোচনার পূর্বে তাঁর প্রতিভা বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে কিভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার আলোচনা প্রয়োজন। পূর্বসৃষ্টির সঙ্গে সংযোগ রেখে পদাবলীর আলোচনায় তাঁর প্রতিভার সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। অবহট্ট ও সংস্কৃত ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থ রচনা করে বিদ্যাপতি যে জীবনদৃষ্টি ও বাকশিল্পের অধিকারী হন সেই পরিশীলিত মনোরাজ্যের উজ্জ্বল ভূমিতে কালজয়ী পদাবলী সাহিত্যের শাশ্বত রসসৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যাপতি তাঁর পাণ্ডিত্য ও স্মৃতিশাস্ত্র জ্ঞানের জন্য মিথিলায় যতই খ্যাতি লাভ করুন না কেন, বিদ্যাপতির কবিপ্রতিভার নিকষ পাথর হচ্ছে তার পদাবলী। পদাবলী সাহিত্যের মধ্যে বিদ্যাপতির মানসজীবন ও শিল্প সৌকুমার্যের অভূতপূর্ব পরিচয় পেয়ে রসিক পাঠকমাত্রই বিস্মিত ও আনন্দিত হন। বিদ্যাপতির পদাবলীর সৃজনশীলতা ও রসসৌকর্যের কাছে তাঁর পূর্ববর্তী রচনার পাণ্ডিত্য ও পৌরাণিক জ্ঞান স্নান হয়ে যায়। বিদ্যাপতি বাঙালি, বৈষ্ণবের গুরু, রসিক বাঙালির শ্রদ্ধেয় কবি, বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকদের নবরসিকের অন্যতম। বাংলার বৈষ্ণব সমাজ, কীর্তনীয়ার দল ও সর্বকালের বাঙালি কাব্যরসিকদের প্রাণের প্রিয়তম কবি বিদ্যাপতি।

বিদ্যাপতির রচনাবলী শিরোনামে এই দীর্ঘ লেখায় আপনাদের উপকার হলে কিংবা ভুল-ত্রূটি নজরে এলে জানাবেন।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!