Last Updated on December 28, 2021 by বাংলা গাইড
অশনি সংকেত (১৯৫৯ খ্রিঃ)
লেখক = বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংরূপ = উপন্যাস।
মূল বিষয় = ১৩৫০-এর মন্বন্তরে শহর থেকে দূরে গ্রামাঞ্চলের মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ, দুর্দশা ও লাঞ্ছনার বাস্তব চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে।
বিশেষ দিক
> তেরশ পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রন্থটি রচিত হলেও লেখকের মৃত্যুর পর ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৩৫০ থেকে ১৩৫২ সাল পর্যন্ত ‘মাতৃভূমি’ পত্রিকায় এই উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
> মন্বন্তরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় মানুষের কান্না ও অধঃপতন, মানবতার লাঞ্ছনা ও বেদনা লেখককে এতটাই বিচলিত করেছিল যে তিনি তাঁর পূর্বের মানসিকতা থেকে সরে এসে এ ধরনের ভিন্ন স্বাদের রচনায় ব্রতী হন।
> উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গঙ্গাচরণের ঘরে আশ্রিত ছিল দুর্গা ভচার্য। মন্বন্তরের অনাহার ও অন্নাভাবের কারণে দুর্গা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে কুণ্ঠিত হয় না। কিন্তু মন্বন্তরে যে ভিক্ষা মেলে না, তা তার বাস্তব অভিজ্ঞতায় ছিল না। উপন্যাসে দেখি, গঙ্গাচরণ ব্রাহ্মণের পরান্নজীবী মানসিকতার মূলে আঘাত করেছেন—“চায়া লাঙল ধরে চাষ করে, আমরা তার উপর বসে খাই, এ ব্যবস্থা ছিল বলেই আজ আমাদের এই দুর্দশা।”
> এই মন্বন্তর যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী ফল তাও দীনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে গঙ্গাচরণের কথোপকথনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—“আরও নাকি চড়বে শুনছি। এখনই খেতে পাচ্চি নে—আরও বাড়লে কি কিনে খেতে পারবো। এই যুদ্ধের দরুন নাকি অমনটা হচ্চে-।”
> বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মন্বন্তরের আর এক কারণ যে মজুতদারি, চোরাচালান, কালোবাজারি বা মুনাফাখোর ব্যবসাদারদের চক্রান্ত তাও চিত্রিত হয়েছে উপন্যাসে।→ অন্নের অভাবে অখাদ্য, কুখাদ্য ভক্ষণ-এর স্বরূপ জেলের বৌ-র কচুডাঁটা তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। আবার মতি মুচিনীর মৃত্যু প্রমাণ করে অনাহারে মৃত্যুর বাস্তব চিত্রকে।
> উপন্যাসের নামকরণ প্রসঙ্গে গ্রন্থে বর্ণিত মতি মুচিনীর মৃত্যু—“ও যেন গ্রামের লোকের চোখ ফুটিয়ে দিয়ে গেল। একটি মূর্তিমান বিপদের সংকেত স্বরূপ ওর মৃতদেহটা পড়ে রয়েছে আমগাছটার তলায়। অনাহারে প্রথম মৃত্যুর অশনি সংকেত।”
> উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গঙ্গাচরণ চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতায় মন্বন্তরের আলেখ্যউপস্থাপিত হলেও উপন্যাসে কোনো সংহত কাহিনি বা আখ্যান নেই।
** অন্নাভাব, অনাহার, বিপর্যয়ের ছবি আঁকতে গিয়ে পল্লীবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য লেখকের নজর এড়িয়ে যায়নি।
** উপন্যাসে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর উপর জয়ী হয়েছে অমলিন মনুষ্যত্ব ও আত্মরক্ষারস্বরূপ।
** অনঙ্গ বৌর সংগ্রাম শুধু বাঁচার নয়, বাঁচানোর। মতি চলে গেলেও যদুপাড়ার হাতছানি থেকে ফিরে এসেছে কাপালী বৌ। ক্ষুধা হেরে গেল মনুষ্যত্বের কাছে, আর এখানেই শিল্পী বিভূতিভূষণের মুন্সিয়ানা।
** সত্যজিৎ রায়ের এই উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।